বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অপরিকল্পিত নগরায়ণ পরিবেশের উপর নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করে এবং এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশ শিল্পোন্নত নয়। তবে শিল্পায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। নগরায়ণ বেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। তবে সব নগরের বৃদ্ধি সমানভাবে হচ্ছে না। বড় নগরের বৃদ্ধির গতি ব্যাপক । কেননা সেখানে শিল্পকারখানা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সরকারি প্রশাসন ও সার্ভিস সেক্টর প্রভৃতি ব্যাপকভাবে বিকশিত হয় ।
বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শহরে বসবাস করে। তুলনামূলকভাবে যদিও শহরবাসীর সংখ্যা বাংলাদেশে কম কিন্তু বর্তমান সময়ে এ হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিবেশগত সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষিজমি কমে যাওয়া, খাবার পানি ও উপযুক্ত পয়ঃনিষ্কাশনের সংকট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা, পরিবহন ও যানজট সংকট, বাসস্থানের অভাব ও বস্তির সৃষ্টি, পানি, বায়ু, মাটি ও শব্দ দূষণ, খোলা জায়গা ও বিনোদন ব্যবস্থার অভাব ।
বাংলাদেশে জনপ্রতি কৃষিজমির পরিমাণ মাত্র ০.০৫ একর। শহরগুলো সাধারণত ভালো উর্বরা শক্তি জমির উপর গড়ে ওঠে এবং ক্রমেই কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে দশ লক্ষ অধিবাসী অধ্যুষিত এক একটি শহরে প্রতিদিন ১,৩৭,৩৬,২৬৩ গ্যালন পানি প্রয়োজন। একমাত্র ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে প্রতিদিন ২৮.৫ কোটি গ্যালন পানি প্রয়োজন। ওয়াসা কর্তৃক সরবরাহের ক্ষমতা ১৮ কোটি গ্যালন এবং এর মধ্যে অপচয় ও অপব্যবহার সাড়ে তিন কোটি গ্যালন। যার কারণে মোট ঘাটতি প্রায় ১৫ কোটি গ্যালনের উপর। শুষ্ক মৌসুমে শহরে পানি সংকট বেশি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন কাজের জন্য একজন মানুষের গড়ে দৈনিক ৭ গ্যালন পানি প্রয়োজন, কিন্তু দেশের শহরবাসী গড়পড়তা এর অর্ধেকও পানি পায় না । ঢাকা ওয়াসা বুড়িগঙ্গা নদীর পানি চাদনীঘাট থেকে আহরণ করে পরিশোধন ও বিতরণ করে থাকে। এক্ষেত্রে মেঘনা ও যমুনা নদীর পানির ব্যবহার জরুরি। ঢাকা শহরে দিনে গড়পড়তা ৯০০ টন বর্জ্য শহরের নিচু খোলা জায়গায় ফেলা হয়। এসব বর্জ্যের তীব্র দুর্গন্ধ ও চোয়ানি ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠস্থ পানিকে দূষিত করে থাকে। অনেক বস্তি এলাকার লোকজন এসব পানি ব্যবহার করে থাকে, যার কারণে চর্ম রোগসহ কলেরা, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোর অবস্থা একই ।
ক্রমবর্ধমান যানবাহন প্রতিটি নগরে লক্ষণীয়। যানবাহনের ধোঁয়ার সঙ্গে অবাধে পলিনিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন, সীসা, অ্যাসবেস্টস্, পারদ, নিকেল, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি বিষাক্ত পদার্থ ভেসে বেড়ায়। যার কারণে হাঁপানি, সর্দি, কাশি ও অন্যান্য এলার্জিজনিত রোগের মাত্রা বেড়ে যায়।
অপরিকল্পিত নগরায়ণ বাসস্থানের তীব্র সংকট সৃষ্টি করে। গ্রাম থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষের আগমনের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে বস্তি। যার কারণে সৃষ্টি হয় দূষিত পরিবেশ এবং ক্রমান্বয়ে ব্যাপক এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে। রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান, চিত্তবিনোদন ব্যবস্থা, সহজলভ্য জ্বালানি, হাটবাজার ইত্যাদি নগরায়ণের আবশ্যকীয় উপাদান। ক্রমবর্ধমান নগরবাসীর জন্য তাৎক্ষণিক ভিত্তিতে এসবের ব্যবস্থা করা দুরূহ ব্যাপার। তাছাড়া পরিকল্পনাহীন ব্যবস্থাপনা ও দুর্বল অর্থনীতির কারণে পরিকল্পিত নগরায়ণ গড়ে তোলা আরও কঠিন। যার ফলে ঘটে থাকে ব্যাপক পরিবেশ অবক্ষয়।
কাজ : অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে কী কী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এর তালিকা তৈরি কর (দলভিত্তিক)।